ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক সাবেক শিক্ষার্থী বিষণ্নতায় পড়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানা গেছে। আজ রবিবার (২৯ মে) এই ঘটনা ঘটে। ফিন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আত্মহত্যাকারী ওই শিক্ষার্থীর নাম মেহেদী হাসান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ফিন্যান্স বিভাগের ১৯ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে। তার বাড়ি ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলায়।
মেহেদীর বেডমেট সূত্রে জানা যায়, করোনার আগে হল ছেড়ে দিয়ে ধানমন্ডিতে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। তিনি প্রায় এক বছর ধরে বিষণ্ণতায় ভুগছিলেন। রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারতেন না। একটি ভালো মানের চাকরিও করতেন। এক বছর আগে তার মা মারা যায়। বাবা মারা গেছে অনেক আগেই।
তার মৃত্যুর বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রথম প্রকাশ করেন মেহেদীর বড় ভাইয়ের বন্ধু গাজীপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মোরাদ আলী। তিনি বলেন, মেহেদী অফিস শেষে স্কয়ার হাসপাতালেরর পেছনে মেসে আত্মহত্যা করেন। সে মা মারা যাওয়ার পর থেকে হতাশায় ছিল। ঘুমাতে পারত না। একারনে তাকে একমাস আগে মোহাম্মদপুরে ভাইয়ের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু আজকে কাউকে না জানিয়ে সে মেসে গিয়ে আত্মহত্যা করে। পরে খোঁজাখুঁজির পর তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
এদিকে মেহেদীর বেডমেট মো. ইমরান মিয়া দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ভাই করোনার মহামারীর আগে হল ছেড়ে দেন।হল ছেড়ে দিয়ে ধানমন্ডিতে থাকতেন। এর পাশাপাশি একটা জব করতেন। তিনি অনেকদিন থেকে অসুস্থ ছিলেন। ঘুমাতে পারতেন না। এটা আমাকে অনেকেই বলল।
এর আগে আজ সন্ধ্যায় সৈয়দ মোরাদ তার নিজস্ব ফেসবুক আইডিতে মেহেদীর আত্মহত্যা নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন। এতে তিনি উল্লেখ করেছেন, বঙ্গবন্ধু হলের প্রিয় ছোট ভাই, ফিন্যান্স বিভাগের মেধাবী ছাত্র মেহেদী আজ সুইসাইড করেছে। খবরটা পাওয়ার পর থেকেই মনে হচ্ছে ওর আত্মা আমার আশে পাশে ঘুরছে, কত কথা বলতে চেয়েছিল আমার সাথে ও,অকৃতজ্ঞ এই আমি সেই সময়টা দিতে পারিনি। মেহদীর বড় ভাই মনোয়ার আমার দীর্ঘদিনের রুমমেট হবার কারণে ওর সাথে আমার সম্পর্ক ছিল অন্যরকম। ওর কাছে আমার ঋণের শেষ নেই, আমাকে সবসময় প্রেইজ করত।
তিনি লিখেছেন, আমার বিসিএস লিখিত পরীক্ষার সময় আমার সাথে প্রতিদিন কেন্দ্রে গিয়েছে। আমি ঢাকায় আছি জানলেই ছুটে আসত দেখা করতে। ৪০তম বিসিএসে আমার দায়িত্বরত কেন্দ্রে লিখিত পরীক্ষা দিছিল। প্রায় বছর খানেক ধরে ভয়াবহ ডিপ্রেশনে ভুগছিল, কিছুতেই ঘুমাতে পারতো না। বেশ কয়েকটা চাকরিও পেয়েছিল।
Nirjhor
Nirjhor Moon
লিফট আতঙ্কে হাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা
দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের মধ্যে লিফট আতঙ্ক বিরাজ করছে।
রোববার (২৯ মে) বিকেল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম এ ওয়াজেদ ভবনের দুটি লিফট হঠাৎ কাজ করা বন্ধ করে দিলে লিফট দুটিতে আটকে পরেন ৭-৮ জন শিক্ষার্থী। লিফটের মধ্যে ১৫ থেকে ২০ মিনিট আটকে থাকেন তারা।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, স্ক্রিনে থার্ড ফ্লোর লেখা উঠে আছে। তবে থার্ড ফ্লোরের গেটে তাদের পাওয়া যাচ্ছিলো না। লিফট দুটি গেটের কাছে না আটকে দুই ফ্লোরের মাঝামাঝিতে আটকে যায়। ফলে চাবি দিয়ে বাহিরে থেকে প্রতিটি ফ্লোরে গিয়ে লিফট খোলা হলেও তারা বের হতে পারছিলেন না। এতে বাহিরে বা ভেতর থেকে তাদের আটকে পড়ার সুনির্দিষ্ট ফ্লোর নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিলো না।
লিফটে আটকে পড়াদের মধ্যে ১৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মাহফুজা পারভিন একজন। তিনি বলেন, ক্লাস শেষে ওয়াজেদ ভবনের ৫ম তলা থেকে নিচ তলায় নামার জন্য লিফটে উঠি। আমাদের লিফটে মোট দুজন ছিলাম। লিফট ৫ম তলা ও ৪র্থ তলার মাঝামাঝি এসে আটকে পরে। এরপর লিফট আর কোনো কমান্ড নিচ্ছিলো না। সেসময় আমরা আতঙ্কিত হয়ে পরি এবং ভয় হচ্ছিল লিফট ছিঁড়ে নিচতলায় পরে যাই কি না। আমরা লিফটে থাকা হেল্প বাটনে ক্লিক করলে বাহিরে এলার্ম বেজে ওঠে।
ভেতরে আটকে পরা আরেকজন ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আতিক তার বন্ধুদের লিফটে আটকে পরার বিষয়টি জানান। তারা বিভাগের স্টাফ আমিনুল ইসলামকে জানালে ভবনের গার্ড থেকে লিফটের চাবি এনে লিফট খোলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু লিফট মাঝামাঝিতে আটকে যাওয়ায় তাদের বের করা সম্ভব হচ্ছিলো না। এসময় ইইই বিভাগের শিক্ষক মিজানুর রহমান ঘটনাস্থলে এসে প্রক্টরকে ফোন দেন। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণমাধ্যম কর্মী, নিরাপত্তা অফিসার এবং প্রক্টর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।
উপস্থিত শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের লিফট সিস্টেম দুর্বল হয়ে পরায় এক প্রকার আতঙ্ক নিয়েই লিফটে ওঠেন তারা। মাঝেমধ্যেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা লিফটে নানাবিধ সমস্যায় পড়েন বলেও অভিযোগ করেন অনেকে।
প্রথমবারের মতো লিফট আটকে পরার ঘটনা ঘটেছে জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। লিফট সিস্টেম হ্যাং হওয়ার কারণে সাময়িক সময়ের জন্য লিফট দুটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। রিস্টার্ট দেয়ার মাধ্যমে পুনরায় লিফট দুটি কাজ করতে শুরু করে এবং যারা আটকে পরে তারা সুস্থভাবে বের হয়ে আসে।
লিফট বিষয়ে নানান সময়ে বিভিন্ন অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, প্রতি দুই মাস পরপর লিফট দুটি সার্ভিসিং করা হয়। তারপরও কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে তা খুঁজে বের করা হবে। আমি ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার সাথে কথা বলব এবং এ বিষয়ে কার্যকরি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।