স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহঃ
দীর্ঘ ৩১ বছর পর ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সন্মেলন হতে যাচ্ছে। জেলার ৫টি উপজেলা ও ৫টি পৌরসভার মোট ১০১০ জন কাউনসিলরের প্রকাশ্য ভোটে নির্বাচিত হবেন জেলা নেতৃত্ব। জেলা সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসবের আমেজ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত এই আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। দলীয় অফিসে নেতাকর্মীদের পদাচারণা বেড়েছে। সকাল থেকে রাত অবধি শত শত নেতা কর্মীর আনাগোনায় মুখরিত। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, আগামী ২৮ মে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাধুহাটী ইউনিয়নের ডাকবাংলা বাজার আব্দুর রউফ ডিগ্রী কলেজ মাঠে জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ঝিনাইদহ জেলা বিএনপি’র সভাপতি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ধানের শীষ প্রতিকের প্রার্থী জেলা সদস্য সচিব এ্যাডভোকেট এম এ মজিদ। এর আগে ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত টানা ২৮ বছর দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন ঝিনাইদহ-২ আসন থেকে একাধিকবার বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য মসিউর রহমান। এরপর ২০১৯ সালের ২০ আগষ্ট পুরাতন কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে এডঃ এসএম মশিয়ূর রহমানকে আহবায়ক ও এড এমএ মজিদকে সদস্য সচিব করে আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মসিউর রহমানের চাচাতো ভাই এম এ মজিদ বিনা প্রত্বিদন্দিতায় সভাপতি হওয়ার ঘোষনায় জেলা কমিটিতে নতুন নেতৃত্বের চমক সৃষ্টি হজতে পারে। জানা গেছে, আগামী ২৮মে জেলা বিএনপি’র দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দিতা করার জন্য দলীয় মনোনায়ন সংগ্রহের সময় ছিল ২৩ মে রাত ৮ টা পর্যন্ত। এ সময়ে সভাপতি পদে একজন, সাধারণ সম্পাদক পদে ৪ জন ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ৫ জন মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেন। তবে বুধবার ২৫ মে রাত ৮টা পর্যন্ত মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ দিকে সাধারণ সম্পাদক পদে মুন্সি কামাল আজাদ পান্নু মনোয়ন পত্র প্রত্যাহার করলে প্রতিদ্বন্দিতায় থাকছেন জাজিদুজ্জামান মনা, আব্দুল মজিদ বিশ্বাস ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল আলীম। অন্যদিকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ৫জন মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করলেও বর্তমান টিকে আছেন সাজেদুর রহমান পাপপু ও শাহাজাহান আলী। জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব এ্যাডভোকেট এম এ মজিদ ছাড়া সভাপতি পদে আর কেউ মনোনায়ন সংগ্রহ না করায় ৩১ বছর পর জেলা বিএনপির সভাপতি পদে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন তিনি। অন্যদিকে ১৫ বছর পর সাধারণ সম্পাদক পদেও আসছে পরিবর্তন। ২০০৭ ও ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত জেলা বিএনপির সম্মেলনে নির্বাচিত সাবেক জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান আহবায়ক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল মালেক ওই পদে প্রতিদন্দিতা করেননি। জানা গেছে জেলা সম্মেলনে এই দুইটি পদে নির্বাচন হবে এবং বাকি পদগুলিতে পরে সমাঝোতার ভিত্তিতে পদ প্রদান করা হবে। এর আগে ২০১৮ সালে মসিউর রহমান দুদকের দায়ের করা দুর্ণীতি মামলায় ১০ বছরের দন্ডাদেশ প্রাপ্ত হন এবং কারাগারে আটক ছিলেন। পরে আপিলে জামিন পান। সাজা প্রাপ্ত হওয়ায় ২০১৮ সালে তিনি সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেননি। ওই নির্বাচনে দলিয় প্রার্থী হন তার চাচাতো ভাই ও নব নির্বাচিত জেলা সভাপতি এ্যড. এম এ মজিদ। অভিযোগ আছে জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠন হওয়ার পর থেকে মসিউর রহমান জেলা ছাত্র দল ও যুবদল নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করতে থাকে এবং বেশ কিছু অনুসারী নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় কর্মসুচী আলাদা ভাবে পালন করে আসছিলেন। অন্যদিকে এমএ মজিদের নেতৃত্বে বিএনপি ও অন্যান্য অঙ্গ সংগঠন সু সংঘঠিত হতে থাকে। জাতীয় দিবস গুলিতে বিশাল মিছিল করে মজিদ প্রমান করেন তার নেতৃত্বে দল সুসংগঠিত এবং শক্ত অবস্থানে আছে। তৃনমুলের নেতা-কর্মীদের চাওয়া পুর্নাঙ্গ কমিটি গঠনের পর মসিউর রহমান ও এমএ মজিদের মাঝে সৃষ্ট দুরত্ব কমিয়ে এক কাতারে রাজনীতি করা। এ বিষয়ে জেলা বিএনপির নব নির্বাচিত সভাপতি এড.এমএ মজিদ বলেন, আমি বিএনপি করি এবং দলের সিদ্ধান্তে কাজ করি। সেই ক্ষেত্রে আমি মনে করি ব্যাক্তিগত রেশারেশীর কোন সুযোগ নেই। জেলা কমিটি গঠনে দলীয় স্বার্থে যদি কারো কোন চাওয়া-পাওয়া থাকে সেটা নেতাকর্মী সকলকে এক সাথে নিয়ে কাজ করার মানুষিকতা আমার আছে। আশা করি দলীয় নিয়ম কানুন অনুসরণ করলে নেতা কর্মীদের মাঝে কোন দ্বিধা-দন্দ থাকবেনা। এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মসিউর রহমান বলেন দলের প্রয়োজনে প্রবীনদের সরে গিয়ে তরুনদের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে হবে এটাই নিয়ম। তিনি বলেন জিয়ার আদর্শের সৈনিক হিসাবে তিনি বিএনপি করেন। যতদিন বেচে আছি ততদিন বিএনপির সাথেই থাকবো ইনশাআল্লাহ। আমার সাথে কারো কোন দন্দ নেই। ঝিনাইদহ বিএনপি আমার হাতে গড়া দল। এদলের নেতা কর্মীরা আমার সন্তানের মতো। তাই আমি চাইনা যে নেতৃত্ব নিয়ে তাদের মাঝে কোন দ্বিধা দ্বন্দ থাকুক। দলের কর্মসুচিতে যখন আমাকে ডাকা হয় তখনই আমি সেখানে উপস্থিত হই। জেলা সম্মেলনেও আমি উপস্থিত থাকবো। এর আগেও দলের কেন্দ্রিয় সকল কমূসুচিতে আমি উপস্থিত থেকেই পালন করেছি।