বন্দর প্রতিনিধি : বন্দরে গণধর্ষণ মামলার আসামি ও রাজাকার পূত্র মাকসুদ বাহিনীর সন্ত্রাসীরা ধর্ষিতার পরিবার ও স্বজনদের গ্রামছাড়া করে বাড়ি ঘরে লুটপাটের ঘটনায় আদালতের নিদের্শে হুকুমদাতা হিসাবে ইউপি চেয়ারম্যান মাকসুদ সহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে বন্দর থানায় একটি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। শবেবরাত রাতে চিড়ইপাড়া নন্দনকান কালোনীতে গনধর্ষণের শিকার কিশোরী(১৫) মা শাহিদা খাতুন বাদি হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন। মামলার অন্যান্য আসামিরা হলো, স্থানীয় জাতীয় পার্টি নেতা আমিনুল শেখ(৪০), ধর্ষক আলমগীর(২৫), তার ভাই আল আমিন(২৮), বাবা শুকুর আলী(৪৮), মা নাসিমা, সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত ধর্ষক রকি’র ভাই আসলাম(২২) জিয়াদ(৪৫), শরিফ(১৯), আরিফ(২৫), রনি (২১), অনিক(২৩),সুমন(২৫), নিলুফা(৪০) আবু তাহের(৪১) ও শামীম(৪০)।
মামলার বিবরণে জানাগেছে, গনধর্ষণ মামলার ২নং আসামি মো. রকি(২০) সিদ্দিরগঞ্জে সড়ক দূর্ঘটনায় আহত অবস্থায় পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুইদিন পর তার মৃত্যু হয়। সড়ক দূর্ঘনায় মৃত্যুর ঘটনাকে তিনকে তাল বানিয়ে মাকসুদ চেয়ারম্যান স্থানীয় কামতাল তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশকে জিম্মি করে গনধর্ষণের শিকার ধর্ষিতার তিন ভাই, মামা ও মামাতো ভাই এবং চেয়ারম্যান মাকসুদের পূত্র শুভ বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলার বাদী নির্যাতনের শিকার ইউপি সদস্য সফুরউদ্দিনকে আসামি করে গনধর্ষণ মামলার আসামির পরিবারকে দিয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করান। মামলা দায়ের করে ওই রাত থেকে টানা ৩-৪ দিন প্রকাশ্যে ধর্ষণ মামলার ১ নং আসামি আলমগীর ও তার পরিবার রাজাকার পূত্র চেয়ারম্যান মাকুসদ বাহিনী ও তার ছেলে শুভ বাহিনীর সন্ত্রাসীরা ধর্ষিতার পরিবার ও স্বজনদের ৫টি বাড়িঘরে লুটপাট চালিয়ে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, টিভি, ফ্রিজ, আসবাবপত্র, দোকান সহ ৫০ লাখ টাকার মালামাল লুটে নিয়ে গেলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা গ্রহন না করায় এ সংক্রান্ত বিষয়ে গনমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে নারায়ণগঞ্জ জেলা জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ওই ধর্ষিতার পরিবারের পক্ষে ২০ এপ্রিল এক আইনজীবি নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট জাহাঙ্গীর আলমের আদালতে একটি পিটিশন মামলার আবেদন করেন । আবেদনের প্রেক্ষিতে বাদী ধর্ষিতার মা জবানবন্ধী ও গনমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টের ভিত্তিতে আদালত বাদীর অভিযোগ থানায় এফ.আই.আর হিসাবে গন্য করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহাকে নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের নিদের্শে শুক্রবার দুপুরে থানায় মামলাটি রুজু করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, শবেবরাত রাতে চিড়ইপাড়া নন্দনকান কালোনীতে গনধর্ষণের ঘটনাটি স্থানীয় ভাবে বিচার সালিশ না মেনে থানায় মামলা করায় ধর্ষিতার পরিবারের প্রতি ক্ষিপ্ত ছিলেন রাজাকার পূত্র মুছাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন। এছাড়াও চেয়ারম্যানের চাঁদাবাজ ছেলে শুভ সহ তার বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা নেওয়ায় কামতাল তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশের ওপর ক্ষোভ ছিলো চেয়ারম্যান মাকসুদের। গনধর্ষণ মামলার ২ নং আসামি রকি বাস থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ । পুলিশের হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আসামি রকির মৃত্যুর ঘটনাটি মাকসুদ চেয়ারম্যান পরিকল্পিত ভাবে পুলিশের বিরুদ্ধে মহাসড়ক অবরুদ্ধ করে রেখে সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনাটি পুলিশকে জিম্মি করে হত্যা মামলা রুজু করান। ধর্ষিতার পরিবার ও স্বজনদের গ্রামছাড়া করে লুটপাট তান্ডব চালায় চেয়ারম্যান মাকসুদ ও তার ছেলে শুভ বাহিনী। গত ১৪ মার্চ ধামগড় ইউপি ৪ নং ওয়ার্ড সদস্য সফুরউদ্দিন গার্মেন্ট থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন চালায় মাকসুদের ছেলে শুভ বাহিনী। এই কারণেই সাজানো এ মামলায় ইউপি সদস্য সফুরউদ্দিনকে আসামি করে চেয়ারম্যান মাকসুদ। নারায়ণগঞ্জ জেলা দায়রা জজ আদালতের আইনজীব মোস্তাফিজুর রহমান খোকন বলেন, গনধর্ষণ মামলার ২ নং আসামি রকি’র সড়ক দূর্ঘটনায় অপমৃত্যু হয়েছে।
এ বিষয়ে ধর্ষণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর মাহবুব আলম আদালতকে প্রতিবেদন আকারে অবগত করেছেন। অপমৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা রুজু করা পুলিশের ক্ষমতার অপব্যবহার হয়রানী মূলক। একটি মিথ্যা সাজানো মামলায় ধর্ষিতার পরিবার ও স্বজনদের গ্রামছাড়া করে সর্বস্ব লুটে নেয় আসামি ও আসামির পরিবার তা দুঃখজনক। ধর্ষিতার পরিবার ও স্বজনদের সর্বস্ব লুটে নেওয়ায় এখন তারা পথের ভিখারীতে পরিনত হয়েছে। গনধর্ষণের শিকার কিশোরীর পরিবারের পক্ষে চেয়ারম্যান মাকসুদ সহ জড়িত সকল আসামিদের গ্রেপ্তার দাবি করছি।
বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা জানান, গনধর্ষণ মামলার বাদীর ওপর হামলা ও বাদীর স্বজনদের বাড়িঘর লুটপাট মারধর করে গ্রামছাড়া করার ঘটনায় দুইটি মামলা করা হয়েছে। বুধবার রাতে হত্যার উদ্দেশ্যে ধর্ষিতার মায়ের ওপর হামলার ঘটনায় ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া হয়েছে। গ্রামছাড়া করে বাড়িঘরে লুটপাটের আদালতের নিদের্শে শুক্রবার মুছাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাকসুদ সহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। পৃথক দুই মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যহত রয়েছে।