সচারচর ক্যাম্পাসের বাহিরে আড্ডা দিতে প্রায়ই বসা হয় আজিমপুর স্টাফ কোয়ার্টারের পুকুর পাড়।ঘন বানিজ্যেক চাপের মধ্যে এক টুকরো প্রকৃতির বৈচিত্র্যতায় মুগ্ধ হৃদয় তৈরি করার ওষুধ। ডিপার্টমেন্টের কাছের বন্ধু নিপুণ শনিবার বিকাল আসর সালাত শেষে,,,টুং টুং টুং টাং টাং টাং,,ফোন আকর্ষণ করলো তাকে ছোঁয়ার জন্য,,, আসসালামুআলাইকুম মামা নিপুণ বল,,,ঔ বেটা আমি কী তোর বাপ,,খালু? বাপ খালু হতে যাবি কেন? মামা।
বন্ধু মানুষ ধরেই কি সালাম কালাম ,,,তুই বেটা সেকেলেই থেকে যাবি,,,
(বুঝতেই পারছি এখন জ্ঞান দেওয়ার সময় নাই ওকে)। যাইহোক বল কি সমস্যা? ঐ পুকুর পাড়,, বিবেকের প্রবেশ,, পুকুর পাড়ে ইডেনিয়ান আছে পারবে তো,, নফসের জবাব ধুর নিপুণ কে সালামের জ্ঞান দিতে হবে না?দাওয়াতী কাজ করতে হবে,,চল দ্রুত। হঠাৎ বিবেকে নফসের যুক্তির কাছে হেরে গেল।
নফসের জয়ে আমি চললাম। পুকুর পাড়ে ছাবকওলায় পাওয়া ইডেনিয়ানের সাথে মুক্ত বাতাসে খোলা আকাশের নিচে সংসার করছে ডিসিয়ান।জিবনে কী করলি ?গোলাপী ঠোঁটে লালচে চেহারার মুচকি হাসির লম্বা দেহের ইংরেজ রোমান্টিক সাহিত্যের ছাত্র।একটা ইডেনিয়ানকে পটাতে পারলা না? ভাবতেই সামনাসামনি দাড়িয়ে আছে ছাবকওয়লার ইডেনিয়ানকে নিয়ে বন্ধু নিপুন। সাথে সিঙ্গেল অন্য এক ইডেনিয়ান। কিরে এটা কি? তোর জন্য সারপ্রাইজ!
বিবেকের কল সালাম দাও,, নফসের যুক্তি ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র তুমি তোমার মুখে সালাম তাও আবার ইডেনিয়ানের সামনে,, গুড আফটারনুন কে ছোট করা হবে,, নফসের যুক্তির সিদ্ধান্তক্রমে “গুড আফটারনুন” দিয়ে দিলাম ।(পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়)। ভেস্তে গেল বিবেকের চাওয়া দাওয়াতি পরিকল্পনা,,বসে গেলাম মুক্ত আকাশের নিচে বন্ধু নিপুনের সংসারের প্রতিবেশীর বেশে।অন্য প্রতিবেশীও আমার মতোই বসে গেলে পুকুর পাড়ে। নফসের চাওয়ার বশবর্তী হয়ে গল্পে মেতে উঠলাম সিঙ্গেল প্রতিবেশীর সাথে।زين للناس حب الشهوات من النساءب(নারীদেরকে পুরুষের জন্য আকর্ষণীয় করা হয়েছে)
(৩-সুরা-আলে-ইমরান:১৪.)যেন এ আয়াতের প্রভাব আমার উপর পতিত হলো। হঠাৎ বিবেক তাড়না দিল,,
قُلْ لِّلْمُؤْمِنِیْنَ یَغُضُّوْا مِنْ اَبْصَارِهِمْ وَ یَحْفَظُوْا فُرُوْجَهُمْ١ؕ ذٰلِكَ اَزْكٰى لَهُمْ١ؕ اِنَّ اللّٰهَ خَبِیْرٌۢ بِمَا یَصْنَعُوْنَ
নবী! মু’মিন পুরুষদের বলে দাও তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি সংযত করে রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থানসমূহের হেফাজত করে। এটি তাদের জন্য বেশী পবিত্র পদ্ধতি। যা কিছু তারা করে আল্লাহ তা জানেন।(২৪: আন্-নূর,:আয়াত: ৩০,)
নফসের যুক্তি তোমার ভেতরে ফিলিংস নাই তুমি কি রুগি ইমরানের ১৪ আয়াত দেখনা? বিবেক পরিস্থিতির কাছে হেরে গেল।
আল্লাহ আকবার,, আল্লাহু আকবার,,সালাতুল মাগরিবের আযান
কিন্তু স্বপ্নেভেসে গিয়েছিলাম দুজনেই কখন জানি অজান্তেই অপবিত্র হয়ে গেছি ।নামায পড়তে যাব নফসের মাসআলা নামায হবে না।
সাময়িক সময়ের জন্য বিবেক পরলোকগমন করেছে।
মাগরিবের সালাত শেষে বের হাওয়া মুসল্লিদের উৎফুল্ল চেহারা দেখে হঠাৎ বিবেক জাগ্রত হলো,,কী করছ তুমি? ۗ واتقوا الله واعلموا ان الله بما تعملون بصير(আল্লাহকে ভয় করো, জেনে রাখো তুমি যা করছ তা দেখছেন,,সুরা-বাক্বারা:২৩৩.)
নফসের যুক্তি একদিন সালাত কাযা করলে কিছুই হবে না,, একদিনিইতো এটা কোনো ব্যাপার না,,এই সুযোগতো প্রতিদিন আসে না,,
আবারও হেরে গেল বিবেক কেটে গেল মাগরিব সন্ধা নেমে এলো এবার ফেরার পালা।
একে অপরকে মনের আদান প্রদান করলাম।
এভাবেই কেটে গেল কিছু কাল,,
হঠাৎ ফজরের সালাতে বন্ধু আশিকের কোরআন তেলাওয়াত শুনে থমকে দাঁড়ালাম,,
إِنَّ شَرَّ الدَّوَابِّ عِنْدَ اللهِ الصُّمُّ الْبُكْمُ الَّذِيْنَ لَا يَعْقِلُوْنَ
‘(আল্লাহর নিকট নিকৃষ্টতম জীব সেই বধির ও মূক যারা কিছুই উপলব্ধি করে না)
বিবেক আরো একটি আয়াত মনে করিয়ে দিল,, إنما يتذكر لاولي الالباب( নিশ্চয়ই বিবেকবানদের জন্যে এই উপদেশ)
আমি বিবেকের আশ্রয়ে থাকতে চাইলাম হঠাৎ আবারো নফস আমাকে যুক্তিতে পরাস্ত করল,,যারা অন্যায় করে তারা জাহান্নামে যাবে তাদের কোনো ক্ষমা নেই।
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا لَنْ تُغْنِيَ عَنْهُمْ أَمْوَالُهُمْ وَلَا أَوْلَادُهُمْ مِنَ اللَّهِ شَيْئًا وَأُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ (নিশ্চয় যারা কাফির তাদের ধন সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি আল্লাহর সামনে কখনও কোনো কাজে আসবে না। আর তারাই হলো দোযখের আগুনের অধিবাসী।তারা সে আগুনে চিরকাল থাকবে।’ (সুরা আলে ইমরান : ১১৬)
আমিও ভাবলাম ক্ষমা যেহেতু নেই তাইলে কি আর করার,,খাও দাও ফুর্তী করো দুনিয়াটা মস্ত বড়।
শুক্রবার বিকাল ইডেনিয়ানের সাথে ঝগড়া মন খারাপ করে ক্যাম্পাসের পুকুর পাড়ে বসে ভাবছিলাম কি করা যায়,,
হঠাৎ সোনালী দিনের প্রত্যাশীর বড় ভাই,, আলীম দাওয়াতি কাজে বেরিয়েছে,,কি ব্যাপার তোমার মন খারাপ কেন?
আমার জীবনের সব পাপের খবর তুলে ধরলাম ভাইকে,,তিনি হঠাৎ মনে করিয়ে দিলেন (সুরা নিসার ১১০)وَمَن يَعْمَلْ سُوءاً أَوْ يَظْلِمْ نَفْسَهُ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللّهَ يَجِدِ اللّهَ غَفُوراً رَّحِيماً
যে ব্যক্তি পাপ কাজ করে অথবা নিজের উপর জুলুম করে(নফসের আশ্রয় দেয়) অতঃপর তওবা করে ।সে ব্যাক্তি আল্লাহ কে ক্ষমাশীল পরম দয়ালু হিসেবে পাবে।
আমার বিবেক জাগ্রত হলো আমিও ঘুরে দাঁড়ালাম দৌড়ে রোমে গিয়ে পেন্ট চেঞ্জ করে নামাজে দাঁড়িয়ে গেলাম।
অঝোরে সিজদায় চোখের পানি ছেড়ে দিলাম।বিশ্বনবী বলেছেন,,
اقراب ما يكون العبد بربه وهو ساجد فاكثروا الدعاء
সিজদা বান্দাহকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়। সুতরাং সিজদায় বেশি বেশি দোয়া করো (মুসলিম)
আমার আত্মায় প্রশান্তির বন্যা বয়ে গেল।
আমি মুক্তির পথ খুঁজে পেলাম।