বঙ্গবন্ধুর নামে ইউনেস্কোর পুরস্কারঃজানালেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক,বিপি নিউজঃ
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর নামে একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তনের প্রস্তাব জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো’র নির্বাহী বোর্ডের ২১০তম সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। আগামী ১১ নভেম্বর প্যারিসে ইউনেস্কো সদর দপ্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ হাতে বিজয়ীদেরকে তুলে দিতে পারেন এই পুরস্কার। আজ শনিবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
প্রধানমন্ত্রীর ইউরোপ সফরের বিস্তারিত তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগামী ১১ নভেম্বর ২০২১ তারিখে প্যারিসে ইউনেস্কো সদরদপ্তরে “UNESCO- Bangladesh Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman International Prize for the Creative Economy” শীর্ষক এই আন্তর্জাতিক পুরস্কারটি বিজয়ী ব্যক্তি বা সংস্থাকে প্রদান করা হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিতব্য এ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে সশরীরে যোগ দিয়ে বিজয়ীদের হাতে সম্মাননা তুলে দিতে পারেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
মন্ত্রী জানান, একই দিনে প্রাক্তন ফরাসি বাণিজ্যমন্ত্রী ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক প্যাসকেল ল্যামির আমন্ত্রণে প্যারিস পিস ফোরামের উচ্চ পর্যায়ের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী যোগ দিতে পারেন।
ড. মোমেন বলেন, আগামী ১২ নভেম্বর ইউনেস্কোর ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে একটি উচ্চ পর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে অংশগ্রহণের জন্য ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এই উচ্চ পর্যায়ের সভায় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশ্বজনীন আদর্শ তুলে ধরার পাশাপাশি জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সর্বজনীন, মানসম্মত ও বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা, এবং সুস্থ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সংস্কৃতি চর্চার গুরুত্বের বিষয়ে তাঁর নিজস্ব চিন্তা ও এ বিষয়ে বাংলাদেশের অর্জনসমূহ বিশ্বের সামনে তুলে ধরবেন । পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর প্যারিসে অবস্থানকালে তাঁর সাথে ইউনেস্কোর মহাপরিচালক মিস্ অদ্রে আজুলের একটি দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে |
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, আগামীকাল রোববার যুক্তরাজ্যের গ্লাসগোতে জাতিসংঘের Framework Convention on Climate Change (UNFCCC)-এর Conference of Parties এর ২৬তম বার্ষিক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। উক্ত সম্মেলনের অংশ হিসেবে শীর্ষ বৈঠক সহ অন্যান্য শীর্ষ পর্যায়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল আগামীকাল গ্লাসগোর উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী আগামী ১ ও ২ নভেম্বর উক্ত সম্মেলনের শীর্ষ বৈঠকসহ আরও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন।
তিনি জানান, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ঝুঁকির মুখে থাকা ৪৮টি দেশের সংগঠন ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) এর বর্তমান সভাপতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল আসন্ন কপ-২৬ শীর্ষ সম্মেলনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
ড. আব্দুল মোমেন বলেন, আসন্ন জলবায়ু সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল বেশ কয়েকটি শীর্ষ পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবে। আগামী ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী কপ-২৬ এর শীর্ষ বৈঠকে ভাষণ দেবেন। এ শীর্ষ বৈঠক ১-২ নভেম্বর তারিখে অনুষ্ঠিত হবে। একই দিন সকালে CVF-Commonwealth এর একটি যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হবে যেখানে প্রধানমন্ত্রী প্রধান অতিথি হিসাবে অংশগ্রহণ করবেন। ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে Action and Solidarity-the critical decade শীর্ষক সভায় অংশগ্রহণ করবেন। ২ নভেম্বর Women and Climate শীর্ষক সভায় প্রধানমন্ত্রী যোগদান করবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানান, সিভিএফ সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ কপ-২৬ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অধিকার আদায়ে বলিষ্ট ভূমিকা রাখছে। এ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ‘সিভিএফ-কপ২৬ লিডার্স ডায়ালগ’ অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত শীর্ষ বৈঠকে সিভিএফ এর সদস্য ও পর্যবেক্ষক দেশের রাষ্ট্র/ সরকার প্রধানগণ, কপ-২৬ আয়োজনকারী দেশ যুক্তরাজ্যের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এ সময় জলবায়ু পরিবর্তন রোধ, জলবায়ু অভিযোজন ও অর্থায়নের লক্ষ্যে আহবান জানিয়ে “Dhaka-Glasgow Declaration” গৃহীত হবে বলেও আশা করছে বাংলাদেশ।
এছাড়াও, প্রধানমন্ত্রী স্কটিশ পার্লামেন্টে স্কটিশ সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ্যে ‘A call for Climate Prosperity’ শীর্ষক একটি বক্তব্য প্রদান করবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সকল শীর্ষ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার পাশাপাশি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও শ্রীলংকার রাষ্ট্রপতি সহ আরও বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে দ্বিপাক্ষিক সাক্ষাতে মিলিত হবেন।
মন্ত্রণালয় আরও জানায়, আগামী ৩-৮ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী লন্ডন সফর করবেন। এ সময় তিনি লন্ডনস্থ ওয়েস্টমিনিস্টার প্যালেসে যুক্তরাজ্যের সংসদের সদস্যদের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে একটি বক্তব্য প্রদান করবেন। বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আয়োজিত একটি বিনিয়োগ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি অংশ গ্রহণ করবেন। এছাড়াও তিনি লন্ডনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের আয়োজনে বঙ্গবন্ধু বিষয়ে গোপন দলিলপত্রের নতুন প্রকাশিত খণ্ডসমূহের মোড়ক উন্মোচন করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। গ্লাসগোতে অবস্থানকালেই প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্যের প্রিন্স অফ ওয়েলস ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন।