নিজস্ব প্রতিবেদক
তরুন ও যুব সমাজের পরিচিত মুখ অয়ন ওসমানের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপারের কাছে দায়ের করা লিখিত অভিযোগে মিলেছে ডাহা মিথ্যার প্রমাণ। নেপথ্য কারণ অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে ২ অভিযোগকারী ভাইয়ের ভয়ঙ্কর অতীত ও বর্তমান ইতিহাস। পুলিশ সুপারের কাছে সেই লিখিত অভিযোগকারী আব্দুস সবুর মোল্লা ও আবু সায়েম মোল্লার পাশবিক নির্যাতনে ধুকে ধুকে মারা গেছেন মৃত মুক্তিযোদ্ধা আজাদ বক্সের এক সন্তান সুফিয়া সিদ্দিকা। সম্পত্তি আত্মসাত করতে নিজের বোন অবিবাহিত সুফিয়াকে সন্ত্রাসীদের নিয়ে হামলা করা হয়েছিল আরো ২বছর আগে। সম্প্রতি মারধোর করা হয় অপর বোন মাবিয়া সিদ্দিকাকেও। আর পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগে আরেক বোন আয়েশা সিদ্দিকা গত ১৮জুন অয়ন ওসমানের অফিসে উপস্থিত ছিলেন বলে উল্লেখ করা হলেও মূলত সেদিন আয়েশা সিদ্দিকা ছিলেন তার নিজের বাসায়। যার প্রমাণও রয়েছে। এমনকি গণমাধ্যমে ও লিখিত অভিযোগে অয়ন ওসমানের বিরুদ্ধে শাসানোর অভিযোগ আনলেও সিসি টিভি ফুটেজে দেখা গেছে সেই সবুর মোল্লাকে অয়ন ওসমানের পাশে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতে। খোজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযোগকারী আব্দুস সবুর মোল্লা ঐ এলাকায় জামায়াতে ইসলামের অন্যতম নেতা হিসেবে পরিচিত, যিনি জামায়াতের আমীর মাওলানা মাইনুদ্দিনের অন্যতম সহযোগী হিসিবে গ্রেফতারও হয়েছিলেন। অপর অভিযোগকারী আবু সায়েম মোল্লা ফতুল্লা ইউনিয়ন বিএনপির নব গঠিত কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক। তার বিরুদ্ধেও রয়েছে একাধিক জ্বালাও পোড়াও মামলা।
খোজ খবর ও তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, হাজীগঞ্জ এলাকার মৃত বীরমুক্তিযোদ্ধা আজাদ বক্স মোল্লার সন্তানদের সম্পত্তি নিয়ে স্থানীয়ভাবে বিরোধের মীমাংসা না হওয়ায় তারা দ্বারস্থ হন স্থানীয় এমপি শামীম ওসমানের ছেলে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ইমতিনান ওসমান অয়নের। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের উপর , বিশেষ করে নারী সদস্যদের উপর নির্যাতনের বিষয়টি জানতে পেরেই তিনি সমাধানের জন্য বসেছিলেন। গত ১৮জুন অয়ন ওসমানের ব্যবসায়ীক কার্যালয়ে মৃত আজাদ বক্সের ছেলে আবু সাইদ মোল্লা, মেয়ে মাবিয়া সিদ্দিকা, নাতি (আয়েশা সিদ্দিকার ছেলে ) মাসুদ এবং আব্দুস সবুর মোল্লা উপস্থিত ছিলেন। সবুর মোল্লার দায়েরকৃত অভিযোগে আবু সাইদ মোল্লা, মেয়ে মাবিয়া সিদ্দিকা, নাতি (আয়েশা সিদ্দিকার ছেলে ) মাসুদ সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত থাকার কথা বলা হলেও ঐ অফিসের সিসি টিভি ফুটেজ পর্যালোচনায় দেখা গেছে সবুর মোল্লাই সেখানে আগে উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি আয়েশা সিদ্দিকার উপস্থিতির কথা বললেও সেখানে ঐ নামে কেউই ছিলেন না। সেখানে অয়ন ওসমান সম্পত্তি নিয়ে আদালতে মামলা থাকার বিষয়টি জেনে তাদের স্থানীয়ভাবে সমাধান হলে নিজেদের মধ্যে বসে বিষয়টি সমাধান করার কথা বলেন। ঐ সময় সেখানে কোন শাসানোর ঘটনাতো ঘটেইনি, উল্টো সবুর মোল্লাকে দেখা গেছে আপ্যায়িত হয়ে সাবলীলভাবে কথা বলছেন এবং তিনি অয়ন ওসমানের পাশে দাড়িঁয়েই সেখানে নামাজ পড়েছেন।
ঘটনার খোঁজ নিতে মঙ্গলবার (২০ জুন) দুপুরে সরেজমিনে গেলে মৃত আজাদ বক্সের ছেলে, আবু সাইদ মোল্লা জানান, তাদের বাবা মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদ বক্স মোল্লা হেবামূলে ৪৬.৫ শতাংশ জমি তাকেসহ অপর ২ভাই বোনকে প্রদান করেন। এই সম্পত্তি গ্রাস করতেই তাদের অপর ২ভাই সবুর মেল্লা ও সায়েম মোল্লা একে একে ৪টি মামলা করেন। সবুর ও সায়েম মোল্লা গংদের অত্যাচারে ২০২১ সালে সুফিয়া সিদ্দিকা নামে তাদেরই এক অবিবাহিত বোনের মৃত্যু হয়। এক পর্যায়ে তাদের অত্যাচার সইতে না পেরে জমির প্রকৃত মালিকরা সবুর ও সায়েমকে মৃত সুফিয়ার ১৫ শতাংশের জমিটি লিখে দিতে চাইলেও তারা তাতে রাজি হয়নি। কিছুদিন আগে তারা আমাকে ও অপর বোন মাবিয়া সিদ্দিকার উপরও হামলা করে। লোকজন দিয়ে আমাদের মালিকানাধীন বাড়ীর ভাড়া নিয়ে যাচ্ছে। একের পর এক মামলা ও হামলার শিকার হলে এবং এই বিষয়ে কোন প্রতিকার না পেয়ে আমরা সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের দারস্থ হতে চাই। কিন্তু তিনি রাষ্ট্রীয় সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সুইজারল্যান্ডে অবস্থান করায় তার ছেলে অয়ন ওসমানের কাছে ধর্ণা দিতে থাকি। এক সময় অয়ন ওসমান বিষয়টি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন আমরা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। তাই তিনি চলমান বিরোধ নিস্পত্তিতে সবাইকে আসতে বলেছিলেন।
এই বিষয়ে আজাদ বক্স মোল্লার আরেক সন্তান মাবিয়া সিদ্দিকা জানান, এই কিছু দিন আগে সবুর ও সামাদ মোল্লা আমার ভবনের দুই ভাড়াটিয়া থেকে জোরপূর্বক ভাড়া আদায় করে নিয়ে আসেন। আমি এই বিষয়ে প্রতিবাদ করায় তারা আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ও মারধর করেন।অথচ পুলিশের ১৪৫ ধারা জারি ছিল। পুলিশ তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে রিপোর্টও দিয়েছির। কিন্তু তারা থানা পুলিশ কিছুই মানেনা। উল্টো প্রশাসন ও ডিবি পুলিশের ভয় দেখায়। তিনি জানান, আমার ভাই সবুর মোল্লা অনেক বছর আগেই ঢাকার নারিন্দার বাড়ি বিক্রি করে মোট ৪৭ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন, ছোট ভাই আমার বাবার থেকে ৩১ লক্ষ টাকা নিয়ে ছিলেন এমএল এম ব্যবসা করতে। তখন তারা বলেছিল এই সম্পত্তিতে কোন দাবি নেই। তাই বাবা জীবদদশাতেই আমাদের তার সম্পত্তি হেবামূলে প্রদান করেন। সেই সময় তাদের কারো কোন আপত্তি ছিল না। কিন্তু পরবর্তীতে তারা লোভে পড়ে আবার সম্পত্তিতে তাদের অংশ দাবি করেন। মাবিয়া বলেন, অয়ন ওসমানের সাথে আমরা প্রথমে দেখা করতে পারিনি। তিনি জমিজমার সমস্যা শুনে বলেছিলেন তিনি এসব বিষয়ে কথা বলেন না। কিন্তু আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন এবং বাড়ীর নারীদের উপর মারধোরের বিষয়টি বলাতেই তিনি আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবার সম্মানের দিকে তাকিয়ে আমাদের বসার অনুমতি দিয়েছিলেন। তার আচরণ ব্যবহারে প্রত্যেকেই মুগ্ধ হই। আমার ভাই সবুর মোল্লা তার সাথে নামাজ আদায় করেন এবং তার সাথে আলোচনা শেষে বিরোধ নিস্পত্তি করে নিবেন বলে প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। কিন্তু আমার মামলাবাজ ভাই তার নামেই অভিযোগ করেছেন। এদিকে আজাদ বক্সের নাতি মাসুদ জানান, অয়ন ওসমানের অফিসে উপস্থিত না থাকলেও আমার মামা সবুর মোল্লা তার অভিযোগে লিখেন আমার মা আয়শা সিদ্দিকা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আমার মামা সবুর মোল্লা হলেন একজন মামলাবাজ লোক, তিনি আমার মায়ের ও মামাদের সম্পদ দখলের জন্য ৪টি মামলা দিয়েছেন। তিনি ও অপর মামা সায়েম মোল্লা বিএনপি জামাতের সাথে জড়িত বলে আমার নানা বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদ বক্স মোল্লা কখনওই তাদের পছন্দ করতেন না। এই ২ মামা তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে হামলা করেন, আবার কথায় কথায় কথায় মামলা করেন।
এব্যপারে অয়ন ওসমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এই পরিবারটি প্রায় ১সপ্তাহ ধরেই আমার সাথে দেখা করতে চাচ্ছিল। কিন্তু আমি কোন বিচার আচার করা পছন্দ করিনা এবং জমিজমা নিয়ে বিরোধের বিষয়টি দেখবে আদালত। কিন্তু যখন তারা জানালো তারা মুক্তিযোদ্ধা পরিবার এবং নারী সদস্যদের উপর মারধোর করা হচ্ছে তখনই আমি তাদের সবাইকে একত্রে বসতে বলেছিলাম। আমি তাদের আপ্যায়ন করেছি এবং বলেছি নিজেদের মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা পিতার সম্মানের কথা মাথায় রেখে বিষয়টি সমাধান করে নেন। বিশেষ করে নারী সদস্যদের উপর নির্যাতনের ছবি দেখে আমি বলছি, নারী জাতিকে যারা সম্মান দিতে জানে না তারা প্রৃকত মনুষত্বের অধিকারী না। আমার মা আমাকে এই শিক্ষাই দিয়েছেন। সেখানে সবুর মোল্লা নিজেই সমাধানের আশ^াস দিয়েছিলেন। তিনি আমার সাথে দাড়িয়ে নামাজ পড়েছেন। কিন্তু পরবর্তীতে শুনলাম সবুর মোল্লা নাকি এসপির কাছে অভিযোগ দিয়েছেন এবং তিনি ও তার ভাই সায়েম মোল্লা কট্টর জামাত-বিএনপির লোক। তাদের কাছে এমন মিথ্যাই আশা করা যায়, এর চেয়ে বেশী কিছু নয়। প্রকৃত সত্য না জেনে যারা এখন বিষয়টি নিয়ে ফেব্রিকেটেড করছেন তাদের জন্য করুনা হচ্ছে।